সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করেছিলো সেই তাদের একজনের ফটো লাগিয়ে একটা হল পরে আছে। আমরা আর এ নাম দেখতে চাইনা। আমরা এই ফটোটা দেখতে চাইনা। আমরা এ নামটাকে পরিবর্তন করতে চাই। হঠাৎ করেই জিয়া হল নিয়ে তার এমন বক্তব্য নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে শহরের অলি-গলি, রাজনৈতিক বোদ্ধামহলে পর্যন্ত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা কথা ওঠে। সত্যের ইতিহাস কেউ আড়াল করে রাখতে পারে না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক জিয়া নয়। তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা পত্রের ৩ নম্বর পাঠক। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর অধীনে চাকরি করেছেন। জিয়া বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। তিনি জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।
কথা আছে ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। বাংলাদেশে প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের প্রচলন করেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম ছিলো এম এ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এম এ হান্নান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পত্রের পাঠক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নানের নাম পরিবর্তন করে এক দরবেশের নামে নামকরণ করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর । খুলনায় বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরের নামে স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে বিএনপি সরকার। সেলিম ওসমান যা বলেছেন তার যুক্তিতে সবই ঠিক আছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বেইমানদের নামে কোন কিছুর নামকরণ হোক তা চায় না।
সেলিম ওসমানের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে দৈনিক সংবাদচর্চা থেকে মুঠোফোন করা হয় জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের কাছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে আইনের কোন শাসন নেই। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। তা না হলে একজন স্বাধীনতার ঘোষকের নামে নামকরণ করা হলের নাম পরিবর্তন করার দুঃসাহস তার হয় কিভাবে। তারা এখন গায়ের জোরে কথা বলে। তাছাড়া সেলিম ওসমান তো ভাড়াইট্টা (ভাড়াটিয়া), তিনি এ জায়গার কেউ না।
একি বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ মাহমুদ বলেন, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি একথা বলতে পারেন না। একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার ঘোষকের নামে নামকরণ করা হলের নাম পরিবর্তন করার ভাষ্য তার মুখে শোভা পায়না। তিনি দেখতে না চাইলে তো আর হবে না, জণগন দেখতে চায়। এটা মূলত অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের বহিঃপ্রকাশ। আমরা আশা করবো প্রতিহিংসা ভুলে তারা জণগনের স্বার্থে রাজনীতি করবে।
সূত্রমতে, ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টাউন হল নামে হলটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এম এ সাত্তার হলটি উদ্বোধনের সময় টাউন হলের পরিবর্তে হলটির নাম দেন শহীদ জিয়া হল। ১৯৯৬ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হলটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন করা হলে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূণরায় জিয়া হল নাম বহাল রাখা হয়।